প্রকাশিত: ১৩/০৪/২০১৫ ১০:০৮ অপরাহ্ণ

গণপ্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের কাজে কেউ বাধা দিলে তার জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে
UKHIYA PIC 13.04.2015(2)
সিবিএন: কক্সবাজারের উখিয়ার সেই বহুল আলোচিত মধুরছড়া-মাছকারিয়ার সরকারি বনভুমিতে গড়ে তোলা রহস্যময় স্থাপনা উচ্ছেদের কাজে যৌথ বাহিনীকে সশস্ত্র বাধার ঘটনার টানা তিনদিন অতিবাহিত হলেও এখনো এ ব্যাপারে কোন মামলা হয়নি। গত বৃহষ্পতিবারের এই স্থাপনা উচ্ছেদের কাজে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে গঠিত ৪০০ সদস্যের বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, আনসার ও বনকর্মী-কর্মকর্তা সহ যৌথ বাহিনীকে সরকারি কাজে সশস্ত্র বাধা দেয়ার পর এতদিনেও আইনগত পদক্ষেপ না নেয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ওই ঘটনায় ২০ জন বনকর্মী আহতের ঘটনায়ও এ পর্যন্ত মামলা রেকর্ড করা হয়নি। এমনকি সেই রহস্যময় স্থাপনা নিয়ে গতকাল কক্সবাজার জেলা আইন শৃংখলা কমিটির সভায় আলোচনার ঝড় বয়ে গেছে।

সেই সাথে উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তবর্তী সরকারি বনভুমিতে কৌশলে মূলত জঙ্গী কর্মকান্ড ছড়িয়ে দেয়ার আশংকাও প্রকাশ করা হয়েছে এরকম অবৈধ স্থাপনার আড়ালে । সভায় সেই রহস্যময় স্থাপনা জরুরি ভিত্তিতে উচ্ছেদ সহ একাজের নেপথ্যে অর্থের যোগান সনাক্ত এবং জড়িত লোকজনের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর পদক্ষেপ নেয়ারও জোর দাবী জানানো হয়েছে। সভায় অবিলম্বে দুর্গম পাহাড়ের স্থাপনার বিষয়টি নিয়ে জেলা পর্যায়ে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠনেরও দাবী জানানো হয়। সভার সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন-এক সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে। এসময়ের মধ্যে রহস্যময় স্থাপনা সরানো না হলে উচ্ছেদ অভিযান আবারো চলবে। কেননা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা জনিত বিষয় এবং সরকারি সহায়-সম্পদ রক্ষার জন্য রাষ্ট্র কাউকে ছাড় দেবেনা।

উক্ত সভায় উপস্থিত স্থানীয় এমপি আবদুর রহমান বদি উখিয়ার মধুরছড়া দুর্গম পাহাড়ের অর্ধশতাধিক স্থাপনা প্রসঙ্গে জানান- ‘সেই রহস্যময় স্থাপনার অর্থের উৎসের সঠিক সন্ধান এখনো মিলেনি। আমার যথেষ্ট সন্দেহ সরকারি বনভ’মিতে অবৈধভাবে গড়া রহস্যময় স্থাপনা নির্মাণকারীদের সাথে দূর্নীতিবাজ বনকর্মীরাও জড়িত। তবে স্থাপনা যারা করেছে তাদের এটা সরিয়ে নিতে গত বৃহষ্পতিবার যে কথা বলেছিলাম তার বাস্তবায়ন হচ্ছে। অর্থাৎ ইতিমধ্যে কয়েকটি স্থাপনার চালা খুলে নেয়া হয়েছে। আমার সন্দেহ আইএমও নামের একটি এনজিও অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে সীমান্তে কিছু একটা করছে কিনা।’

সভায় কক্সবাজারের সরকারি কৌশুলী (পাবলিক প্রসিকিউটর) এডভোকেট মমতাজ আহমদ বলেন-রাষ্ট্রের সম্পদ রক্ষার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের কাজে কেউ বাধা দিলে তার জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। গত বৃহষ্পতিবার সরকারি কর্মকর্তাদের সশস্ত্র বাধার ঘটনায় কারা জড়িত সেটা বড় কথা নয়। তবে এ ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থাকলে আইনের শাষন প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য। তাই সরকারি সম্পদ রক্ষার জন্য সরকারি কর্মচারিদের বাধার ঘটনার ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে তিনি মতামত ব্যক্ত করেন। কক্সবাজার দক্ষিন বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা আবদুল আউয়াল সরকার সভায় জানান-সরকারি কর্মচারীদের সশস্ত্র বাধা দেয়া সহ ২০ জন বনকর্মী আহতের ঘটনায় মামলা দায়েরের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

গতকাল কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেনের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্টিত হয়। সভায় জেলার সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ সহ সরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ এবং পেশাজীবী সংগটনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা মোঃ শাহজাহান বলেন-‘আন্তর্জাতিক জঙ্গীবাদী এনজিওগুলো কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী উখিয়া, টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার গহীন অরণ্য সহ দুর্গম পাহাড়গুলোকে টার্গেট করেছে-এটা নতুন কিছু নয়। তবে আগে এসব এনজিওগুলোর সাথে সম্পৃত্ততা ছিল বিএনপি-জামায়াতী লোকজনের আর এখন ক্ষমতার পালা বদলে সম্পৃত্ততাও পাল্টে গেছে। বিদেশী অর্থের লোভে যারা সীমান্ত এলাকায় রহস্যময় স্থাপনা গড়ার কাজে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা দরকার।’

সভায় বিজিবি-৪২ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল আবুজার আল জাহিদ বলেন-মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে ইয়াবা এবং রোহিঙ্গা এক ভয়াল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এ দু’টির মধ্যে সবচেয়ে বেশী সমস্যা হচ্ছে রোহিঙ্গা। কেননা রোহিঙ্গারা ইয়াবা পাচার করে, সরকারি জমি দখল করে, আইন-শৃংখলার অবনতি ঘটায়, দেশ বিরোধী কাজে লিপ্ত হয় এবং সর্বোপরি জঙ্গী কর্মকান্ডেও জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে। তাই মিয়ানমার সীমান্তে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দেয়া দরকার রোহিঙ্গা সমস্যাকে।

কক্সবাজারের চেম্বার নেতা আবু মোরশেদ চৌধুরী সভায় বলেন-উখিয়ার দুর্গম পাহাড়ে রহস্যময় স্থাপনা গড়ে তোলার নেপথ্যে জড়িত এনজিওর সনাক্ত করা জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজন। সেই সাথে এসব স্থাপনা নির্মাণে জড়িত ব্যক্তিদেরও আইনের আওতায় আনা দরকার। তিনি বলেন-‘লোক দেখানোর মত’ করেই স্থাপনাগুলো সরানোর কাজ শুরু হয়েছে বলে আমরা শুনেছি। তবে আমরা চাই যৌথ বাহিনী একটি সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে এসব গুঁড়িয়ে দেবে। সভায় অনেক আলোচক সরকারি বনভুমির স্থাপনা সরানো নিয়ে আই ওয়্যাশ করারও অভিযোগ তুলেন।

প্রসঙ্গত-কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের পশ্চিমে দুর্গম মধুরছড়া নামক পাহাড়ে সশস্ত্র পাহারা বসিয়ে স্থানীয় দুর্নীতিবাজ বন কর্মীদের যোগসাজসে ১০/১৫ একর বনভুমি দখল করে সেমিপাকা অর্ধ শতাধিক স্থাপনা গড়ার কাজের তত্বাবধানে রয়েছেন এমপি আবদুর রহমান বদির শ্যালক, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী। গহিন পাহাড়ের আড়ালে বিপুল অংকের টাকায় অত্যন্ত পরিকল্পিত রহস্যময় এসব স্থাপনা নির্মাণের অর্থের উৎস নিয়ে এলাকার মানুষের মুখে মুখে বিদেশী এনজিওর কথা বলা হচ্ছে। তবে এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেছেন-মাছকারিয়া ভুমিহীন সমিতির সদস্যরা নিজেদের চাঁদার টাকায় এসব স্থাপনা গড়ে তুলেছেন।

পাঠকের মতামত

  • ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত
  • হিমায়িত মাংস ও দুধ খাওয়ার জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রচারণা সপ্তাহ
  • সাগরপথে মালয়েশিয়া পাচারকালে নারী ও শিশুসহ ১৮ জন রোহিঙ্গা উদ্ধার, এক দালাল আটক
  • বৌদ্ধ তারুণ্য সংগঠন- সম্যক এর ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
  • টেকনাফে নিখোঁজের এক সপ্তাহ পর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার
  • টেকনাফে পুলিশের অভিযানে ১৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামী গ্রেফতার
  • কর্মক্ষেত্রে অনন্য কক্সবাজারের একমাত্র নারী ইউএনও নীলুফা ইয়াসমিন
  • টেকনাফে অর্ধডজন মামলার আসামি ডাকাত আবুল খায়েরসহ গ্রেপ্তার-২
  • ১৫ ঘন্টা পর ট্রলারসহ ৫৬ জেলেকে ছেড়ে দিয়েছে মিয়ানমারের নৌবাহিনী
  • চকরিয়ায় থানার সামনে সাংবাদিকের উপর হামলা
  • সাগরপথে মালয়েশিয়া পাচারকালে নারী ও শিশুসহ ১৮ জন রোহিঙ্গা উদ্ধার, এক দালাল আটক

    সাগরপথে মালয়েশিয়া পাচারকালে নারী ও শিশুসহ ১৮ জন রোহিঙ্গা উদ্ধার, এক দালাল আটক

      আব্দুস সালাম, টেকনাফ:: সাগরপথে টেকনাফের বাহারছড়ায় মালয়েশিয়া পাচারকালে নারী ও শিশুসহ ১৮ জন রোহিঙ্গাকে ...